আহারে উৎসবের রঙ – বাঙালি উৎসব ও ভোজনের সম্পর্ক

বাঙালি উৎসব ও ভোজনের সম্পর্ক

আহারে উৎসবের রঙ – বাঙালি উৎসব ও ভোজনের সম্পর্ক

বাঙালির যে কোনো উৎসব উদযাপনে প্রাণবন্ত এবং জিভে জল আনা খাবারের সম্ভারের সম্বন্ধে একটি আনন্দদায়ক ভ্রমণে স্বাগতম!

এই ব্লগ পোস্টে, আমরা জানার চেষ্টা করবো বাংলার মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক জগৎ সম্বন্ধে এবং  খাবার কি ভাবে সেই উদযাপনের কেন্দ্রে স্থান করে নেয় এবং প্রতিটি আনন্দের অনুষ্ঠানের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে।

বাঙালি এবং ভোজনের যে নিবিড় সম্পর্ক যুগ যুগ ধরে বয়ে চলেছে তা সে যে কোনো নির্ভেজাল ছুটির দিন হোক, কিংবা বাড়ির কোনো অনুষ্ঠান অথবা কোনো বড় উৎসব বাঙালি সমাজ সর্বদা খাবার এবং ভোজন কে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে এবং আগত অতিথিদের স্বাদে পরিতৃপ্তি করার জন্য কোনো প্রকার কার্পণ্য করেনা। 

বাঙালি সংস্কৃতির পরিচয় এবং খাবারের সাথে এর দৃঢ় সংযোগ

সমৃদ্ধ চাষের জমি সহ বাংলা ঐতিহ্যগতভাবে একটি কৃষিনির্ভর সমাজ। বাংলায় বহু-ফসলের প্রচলন। এখানে সারা বছরই নানা ধরনের শাক-সবজি ও ফলের চাষ হয়। বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষি ও দুগ্ধ খামারের জন্য ব্যবহৃত গবাদি পশুপালন করা হয় যা বাংলায় ঘি, মাখন, দই থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের দুগ্ধজাত পণ্যের প্রধান উৎস।

বাঙালি সংস্কৃতি সমৃদ্ধ এবং অনন্য এবং খাবারের সাথে এর দৃঢ় সংযোগ রয়েছে। বাঙালিরা খেতে ভালোবাসে এবং তাদের উদযাপন প্রায়শই ভোজন কেন্দ্রিক হয়। ধর্মীয় ছুটির দিন থেকে শুরু করে বিয়ে পর্যন্ত, খাবার বাঙালি জীবনে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে।

মাছের প্রতি বাঙালির ভালোবাসা বিশ্ববন্দিত সে কারণেই বাঙালির আরেক পরিচয় মাছে ভাতে বাঙালি। তারা এটি ভাজা, ঝোল এবং আরো রকমারি আকর্ষণীয় পদ যেমন  বেকড, পাতুরি, কালিয়া, সর্ষে দিয়ে ঝাল ইত্যাদি প্রস্তুত করে যা খুবই সুস্বাদু। ভাতও বাঙালির খাদ্যের একটি প্রধান উপাদান, এবং তারা ভাতের অবশিষ্টাংশ দিয়ে নানারকম সৃজনশীল পদ তৈরী করে।

বাংলার মিষ্টি সারা ভারত এমনকি বিদেশেও সমান জনপ্রিয়। মিষ্টি বাঙালির যে কোনো ভোজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিছু ঐতিহ্যবাহী পছন্দের মধ্যে রয়েছে রসগোল্লা,পায়েশ, মিষ্টি দই, সন্দেশ এবং রসমালাই।

বাঙালিরা তাদের বিভিন্ন পূজা পার্বনে নানারকমের ঐতিহ্যপূর্ণ খাবারের পদ প্রস্তুত করে।  বাঙালিদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উৎসব হলো দূর্গাপূজা। এই উৎসবে সমস্ত বাঙালি একসাথে পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবদের সাথে আনন্দে মেতে ওঠে, এই সময় সবার ঘরে ঘরে বিভিন্নরকম ঐতিহ্যপূর্ণ নিরামিষ এবং আমিষ খাবারের নানা রকমের পদ তৈরী করা হয়। নিরামিষ খাবারের মধ্যে যেমন লুচি, খিচুড়ি, পোলাও, ছোলার ডাল, বেগুনি, সুক্ত, তরকারি, আলুর দম, ছানার ডালনা, পটোলের দর্মা, ধোকার ডালনা, চাটনি, পায়েস, নানা রকমের মিষ্টি। আমিষ খাবারের  মধ্যে যেমন মাছ মাংসের নানা রকম পদ, বিরিয়ানি এছাড়া আরো অনেক রকমের সম্ভার থাকে।

বাঙালিরা তাদের খাবার অন্যদের সাথে ভাগ করে নিতে ভালোবাসে এবং আতিথেয়তা তাদের সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আপনি যদি কখনও একজন বাঙালি বাড়িতে আমন্ত্রিত হওয়ার সুযোগ পান, তাহলে আপনি অবশ্যই একটি চমৎকার খাবার পাবেন - এবং বাঙালি সংস্কৃতির একটি স্থায়ী ছাপ পাবেন।

bengali wedding catering in kolkata

ঐতিহ্যবাহী খাবারের রেসিপি

বাঙালি যে কোনো অনুষ্ঠান উদযাপনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হল খাবার। ঐতিহ্যবাহী বাংলা খাবারের প্রচুর বিস্তৃত সম্ভার  এবং প্রতিটি খাবারের একটি বিশেষ অর্থ রয়েছে। একটা জাতির সমগ্র বিশ্বের কাছে অন্যতম পরিচয় তাদের খাদ্যাভ্যাসের গুনে। কেউ ভালোবাসেন খেতে, কেউ খাওয়াতে, কেউ বিভিন্ন খাবারের আলোচনা করতে।

জনপ্রিয় কিছু ঐতিহ্যবাহী বাংলা খাবারের রেসিপিগুলি নিম্নে বর্ণনা করা হলো।

লুচি আলুর দম : অলস রবিবার জন্য লুচি আলুর দম হল পছন্দের বাঙালি কম্বিনেশন। লুচি যা পুরির মতো এবং এটি সাধারণত আলুর দমের সাথে খাওয়া হয়, যা একটি আলুর মশলাদার সংস্করণ।

luchi alur dom

শুক্তো : বাঙালির পাতে শুক্তো একটি জনপ্রিয় পদ। শুক্তো বলতে অনেকে শুধুমাত্র তেতোকেই বোঝেন। গরম ভাতের সঙ্গে শুক্তো হল 'অলটাইম হিট'। শুক্তো তৈরী হয় নানা রকম সবজি যেমন আলু, বেগুন, উচ্ছে, পেঁপে, সজনে ডাঁটা, রাঙাআলু, বরবটি, কাঁচকলা দিয়ে।

shukto

আলু পোস্ত : এই খাবারটি আলু, টমেটো, পেঁয়াজ, কাঁচা লঙ্কা, পোস্ত বাটা, সর্ষের তেল দিয়ে তৈরি করা হয় এবং পরিবেশন করা হয়।

alu posto

দই কাতলা : দই দিয়ে তৈরি একটি মাছের পদ, এই খাবারটি যে কোনো শুভ অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা হয়।

সর্ষে ইলিশ : একটি ক্লাসিক বাঙালি খাবার, এই মাছের পদটি সরিষার বীজ দিয়ে তৈরি করা হয় এবং বিশেষ অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা হয়।

Sorshe Hilsa-babul-caterer-best-caterers-in-kolkata

কষা মাংস : মটন প্রেমীদের জন্য এটি অন্যতম ফেভরি। এটি বিভিন্ন মশলা যেমন আদা, পেঁয়াজ, রসুন এছাড়া টমেটো আলু সহযোগে তৈরী সুস্বাদু একটি পদ যা গরম ভাত বা পুলাও এর সাথে খাওয়া হয়।

পায়েস : বাঙালির যে কোনো উৎসব অনুষ্ঠানে পায়েস থাকবেই। পায়েস ছাড়া যেকোনো শুভ অনুষ্ঠান অসম্পূর্ণ থেকে যায়। গোবিন্দভোগ চাল, দুধ, ঘি, চিনি, কাজু ও কিশমিশ এবং এলাচ দিয়ে তৈরি একটি মিষ্টান্ন, যা বিবাহ এবং অন্যান্য বিশেষ অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা হয়।

payesh

সুতরাং খাবার হলো বাঙালি সংস্কৃতির একটি অপরিহার্য অংশ, তা সে ছোট কোনো ফ্যামিলি গেট টুগেদার হোক বা বিয়ে অথবা অন্য কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান, যে কোনো উদযাপনে খাবার একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে।